সিলেট স্টেশন ক্লাবের যাত্রা শুরম্ন হয় ১৮৮৬ সালে। যতটুকু জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলে টি-পস্নান্টাররা তাদের একত্রে মিলিত হওয়া এবং চিত্তবিনোদনের জন্য এই ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় চা বাগানগুলোর ম্যানেজার এবং এসিসটেন্ট ম্যানেজার ছিলেন ইংরেজ। নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সিলেটে তখন যাত্রা বিরতি দিতেন ইংরেজ টি- পস্নান্টাররা। এর প্রমাণ মেলে কয়েক বছর আগ পর্যমত্ম ক্লাবে একটি ঘোড়ার আসত্মাবল বিদ্যমান ছিল। মূলত ব্রিটিশ নাগরিকরাই এই ক্লাবের সদস্য হতে পারতেন। কিন্তু ১৯৪৭ সালে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলে এ ক্লাবগুলোর ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। ১৯৪৮ সালে সিলেট স্টেশন ক্লাবের মালিকানা ও দায়িত্বভার গ্রহণ করেন সিলেটের ৯(নয়)জন সম্মানিত ব্যক্তি। সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব এম. খুর্শেদের মধ্যস্থতায় এ পালাবদলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সিলেটের নাগরিক সমাজের পক্ষে যে ৯(নয়) জন ক্লাবের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তাঁরা হচ্ছেন সর্বজনাব আমিনুর রশিদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন রশিদ আহমেদ, খাঁন বাহাদুর আব্দুল হাই চৌধুরী, রনবীর লাল দাস, বিমলাংশু সেনগুপ্ত, কালিপদ চৌধুরী, রণেন্দ্র নারায়ন চৌধুরী, সমরেন্দ্র নারায়ন চৌধুরী এবং বিনোদ লাল দাস।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সিলেট স্টেশন ক্লাবের কর্মকা--র ব্যাপক পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগতে শুরম্ন করে। কেবল মাত্র চিত্ত বিনোদনে সীমাবদ্ধ না থেকে ক্লাবের কর্মকা- আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রসার লাভ করে। বাংলা সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশ, আর্তমানবতার সেবা এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রেও এই ক্লাবের উজ্জ্বল উপস্থিতি লÿ্যনীয় হয়ে উঠে। যার ধারাবাহিকতায় ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটি ২০১১ সালে সোয়াশো বছর অতিক্রম করে।
সিলেট স্টেশন ক্লাব এখন একটি সামাজিক সংগঠন। এ অঞ্চলের সাহিত্য, সংস্কৃতির সাথে ক্লাবের রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র। দেশের আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও ক্লাবের রয়েছে বলিষ্ঠ অবদান। এ ক্লাবের সদস্যরা সমাজে সর্বস্থরে প্রতিষ্ঠিত এবং নানা সামাজিক কর্মকা-- ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমাজসেবা, সংস্কৃতি, চা-কর, কূটনীতি, ব্যাংকিং, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ সবক্ষেত্রে এ ক্লাবের সদস্যদের রয়েছে ঈর্ষণীয় সামাজিক অবস্থান।
আমাদের মহান মুক্তিযদ্ধে এই ক্লাবের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। বাঙালি জাতির জীবনে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ। সিলেট অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এ ক্লাবের অনেক সদস্য। এদের মধ্যে অন্যতম সর্বজনাব ইসমত আহমদ চৌধুরী, আব্দুল মুয়িদ চৌধুরী, মসউদ আহমদ চৌধূরী, মোঃ ইউসুফ তারম্ন মিয়া, নির্মল চৌধুরী, বিমলাংশু সেন গুপ্ত প্রমুখ। মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করায় পাক হানাদার বাহিনী বিমলাংশু সেন গুপ্তকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। একইভাবে ঢাকায় হত্যা করা হয় অপর সদস্য নির্মল চৌধুরীকে এবং তাঁকে আশ্রয় দেওয়ায় চা-কর সায়েদুল হাসানকেও হত্যা করে হানাদার বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধে ক্লাব সদস্যদের এই আত্নত্যাগ ও ভূমিকা আজ ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়।
ব্রিটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবটি নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। শতাব্দী পেরিয়ে আরও সিকি শতাব্দী অহর্নিশ পথচলা একটি সামাজিক সংগঠনের জন্য বিরল ঘটনা। সিলেট স্টেশন ক্লাব লিমিটেড এখন শুধু একটি সামাজিক সংগঠনই নয় বরং অনেক জানা-অজানা ইতিহাসের নীরব সাক্ষী। ‘তিন পতাকা’ ধারণ করে স্টেশন ক্লাবের এই নিরমত্মর এগিয়ে চলা এখন অনেক গৌরবের-সম্মানের।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS